বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ইতালিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়। কারণ ইউরোপ গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় একটি জায়গা। এখানে মানুষ বেশ কিছু কারণে যেতে চায়। এখানে কাজ, পড়াশোনা, এবং উন্নত জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে অনেকেই ইউরোপে পাড়ি জমাতে চায়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার নিয়ম
- বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার নিয়ম জানুন
- ইউরোপ যাওয়ার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা
- ইউরোপ যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিসার ধরন
- ইউরোপ যাওয়ার ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া
- ইউরোপ যাওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন
- কিভাবে প্রস্তুতি এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা করবেন
- ইউরোপে থাকার নিয়ম এবং নিরাপত্তা নির্দেশিকা
- ইউরোপের কিছু জনপ্রিয় দেশ ও তাদের ভিসা প্রক্রিয়া
- ইউরোপ যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ সমস্যা এবং সমাধান
- শেষ কথা
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার নিয়ম জানুন
- উদ্দেশ্য নির্ধারণ: ইউরোপ যেতে হলে প্রথমে আপনাকে ইউরোপ যাওয়ার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হবে। কারণ আপনি কি জন্য ইউরোপে যেতে চান সেই উদ্দেশ্য এবং আপনার ইউরোপে যাওয়ার পরে কিভাবে সেখানে থাকবেন এবং চলবেন সেটির উদ্দেশ্য অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় ভিসার ধরন: আপনি ইউরোপে বেশ কয়েক ভাবে যেতে পারেন এবং ইউরোপে যাওয়ার জন্য বেশ কয়েক ধরনের ভিসা প্রদান করে থাকে বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপ সরকার।এ বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, ও শেনজেন ভিসা।
- ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া: ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। আপনি যে ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করবেন তার সাথে যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন পড়বে সেগুলো সঠিকভাবে আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে।
- ভ্রমণ পরিকল্পনা: ভ্রমণ পরিকল্পনা অবশ্যই করতে হবে এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
ইউরোপ যাওয়ার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা
- উচ্চ শিক্ষাঃ বাংলাদেশের মানুষ প্রথমত ইউরোপের যাওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে উচ্চ শিক্ষা প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক স্টুডেন্ট উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় ইউরোপে ভ্রমণ করে থাকে। কারন ইউরোপের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত এবং এই উন্নত শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আমাদের বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ইউরোপ সরকার অনেক স্টুডেন্টকে ইউরোপে স্টুডেন্ট ভিসায় প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে থাকে।
- কর্মসংস্থানঃ আমাদের বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক মানুষ উন্নত জীবনযাপনের আশায় বা বেশি অর্থ উপার্জন করার আশায় ইউরোপে পাড়ি জমে থাকে। বাংলাদেশের থেকে ইউরোপে শ্রমের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে আমাদের বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক শ্রমিক উন্নত জীবন যাপন এবং বেশি অর্থ উপার্জনের আশায় ইউরোপে পারি জমিয়ে থাকে।
- পর্যটনঃ ইউরোপ এমন একটি দেশ যে দেশে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অনেক পর্যটন যায় সে দেশের প্রকৃতি এবং সেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্য। তাই প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ ইউরোপে গিয়ে থাকে ইউরোপের প্রকৃতি এবং সেখানকার বিখ্যাত কিছু জায়গা দেখার জন্য এবং সেখানকার সংস্কৃতি এবং চলাফেরা এবং উন্নত জীবন যাপন এবং সেখানকার পরিবেশের সাথে এবং সেখানকার মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ প্রতিবছর ইউরোপে পাড়ি জমায়।
ইউরোপ যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিসার ধরন
- স্টুডেন্ট ভিসাঃ বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ইউরোপে অনেক স্টুডেন্ট শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য ইউরোপে পাড়ি জমায়। স্টুডেন্ট ভিসার জন্য যে প্রয়োজনীয় কাগজগুলো প্রয়োজন পড়ে তা হলো: পাসপোর্টের কপি (কমপক্ষে ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে), ভর্তির প্রমাণপত্র (এডমিশন লেটার), শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি প্রদানের প্রমাণ, আর্থিক সহায়তার প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট), হেলথ ইন্সুরেন্স।
- ওয়ার্ক পারমিটঃ ইউরোপে কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ ইউরোপে পারি জমায়। কিছু কিছু নির্দিষ্ট দেশ নির্দিষ্ট কোন কাজের জন্য ওয়াট পারমিটের জন্য ভিসা প্রদান করে থাকে। ওয়ার্ক পারমিটের জন্য যেসব ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন পড়বে তা হলো: চাকরির অফার লেটার, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, কাজের অভিজ্ঞতা প্রমাণপত্র, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ইন্সুরেন্স।
- শেনজেন ভিসাঃ পর্যটকদের জন্য ইউরোপ সরকার যে ভিসা প্রদান করে থাকে সেটি কে শেনজেন ভিসা বলা হয়ে থাকে। এ ভিসা পাওয়ার জন্য যেসব ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন পড়ে তা হলো: পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৩ মাস মেয়াদ থাকতে হবে), ভ্রমণের প্রমাণ (ফ্লাইটের টিকিট), হোটেল বুকিং বা থাকার ঠিকানা, পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা, ট্রাভেল ইন্সুরেন্স ( কমপক্ষে ৩০ হাজার ইউরো কভারেজ সহ)।
ইউরোপ যাওয়ার ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া
- অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণঃ নির্দিষ্ট দূতাবাস বা কনসাল্ট ওয়েবসাইট থেকে ভিসা আবেদন ফর ডাউনলোড করে যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।
- ডকুমেন্টস জমাঃ ভিসা আবেদনের সময় অবশ্যই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো জমা করতে হবে
- ভিসা ফি প্রদানঃ ভিসা আবেদনের সাথে সাথে ভিসা ফি প্রদান করতে হবে। এক এক ধরনের ভিসার জন্য এক এক রকম ফি হতে পারে।
- ইন্টারভিউঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বা অনেক সময় দেখা যায় ভিসা আবেদন করার পরে সাক্ষাৎকার বা ইন্টারভিউ এর প্রয়োজন পড়ে।
- বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানঃ ইউরোপের কিছু দেশে ভ্রমণ করার জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করার প্রয়োজন পড়ে থাকে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের জন্য আঙুলের ছাপ ও ছবির প্রয়োজন হয়।
- ভিসা অনুমোদনঃ তখন আপনাকে পরিকল্পনা এবং যাত্রার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
ইউরোপ যাওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন
- পাসপোর্টঃ ভ্রমনের জন্য মেয়াদ থাকবে এমন একটি পাসপোর্ট অবশ্যই প্রয়োজন পড়বে।
- আবেদন ফরমঃ অবশ্যই নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
- ব্যাংক স্টেটমেন্টঃ ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রমাণ থাকতে হবে যে আপনি আর্থিকভাবে ইউরোপ ভ্রমনের জন্য সমর্থ্যবান।
- হেলথ ইন্সুরেন্সঃ ইউরোপের বেশিরভাগ তেজ ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্য বীমা থাকা বাধ্যতামূলক করে থাকে। তাই অবশ্যই হেলথ ইন্সুরেন্সের প্রয়োজন পড়বে।
- অভ্যর্থনা চিঠিঃ কাজ বা পড়াশোনার জন্য ইউরোপে ভ্রমণ করলে অবশ্যই অভ্যর্থনা চিঠি বা স্পন্সার চিঠি জমা দিতে হবে।
- ছবিঃ নির্ধারিত সাইজের বা ফরম্যাটের ছবি জমা করতে হবে যা অনেক দূতাবাসের প্রয়োজন পড়ে।
কিভাবে প্রস্তুতি এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা করবেন
কিভাবে প্রস্তুতি এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা করবেন সে বিষয়ে জানতে গেলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে ভ্রমণের তারিখ ঠিক করে নেওয়ার সময় অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে সেটি যেন আপনার অনুকূলে থাকে। এছাড়া ভ্রমণের জন্য ফ্লাইট টিকিট থাকার ব্যবস্থা এসব বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে ভিসা অনুমোদন পাওয়ার পর পরে এগুলো বুকিং করে নেওয়া উত্তম। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির জন্য অনেক দেশের ভ্রমণ বিরোধী পরিবর্তন করা হয়েছে।
অনেক দেশেই কবিদের টেস্ট রিপোর্ট ও সনদ প্রয়োজন হতে পারে ভ্রমণ করার জন্য। এক্ষেত্রে অবশ্যই কোভিড-১৯ এর টেস্ট রিপোর্ট এবং সনদ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। ইউরোপ ভ্রমণের সময় অবশ্যই ব্যয় নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। ব্যয় অনুসারে বাজেট প্রস্তুত করতে হবে এবং জরুরি খরচের জন্য কিছু অর্থ সংরক্ষিত করে রাখতে হবে।
ইউরোপে থাকার নিয়ম এবং নিরাপত্তা নির্দেশিকা
ইউরোপের কিছু জনপ্রিয় দেশ ও তাদের ভিসা প্রক্রিয়া
- যুক্তরাজ্যঃ বাংলাদেশদের জন্য ইউরোপের একটি জনপ্রিয় দেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্য। যুক্ত রাজ্য স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট সহ বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রদান করে থাকে।
- জার্মানিঃ জার্মানি শিক্ষা ও কাজের জন্য বাংলাদেশীদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি দেশ। এখানে বাংলাদেশের মূলত স্টুডেন্ট ভিসা এবং কাজের জন্য যায়। এ দেশের স্টুডেন্ট ভিসা অন্যান্য ভিসার থেকে অপেক্ষাকৃত সহজ এবং আর্থিক সহায়তা সুযোগ বেশি।
- ফ্রান্সঃ পর্যটকভিত্তিক একটি দেশ ফ্রান্স। প্রতিবছর এখানে অনেক পর্যটক ছুটি কাটাতে আসে। ফ্রান্সে শেনজেন ভিসার মাধ্যমেও ফ্রান্সের ভ্রমণ করা যায়।
- ইতালিঃ ইতালি মূলত পর্যটন এবং কাজের জন্য সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। ফ্যাশন, শিল্প, এবং খাবারের জন্য ইতালি বিশেষভাবে পরিচিত লাভ করেছে বিশ্বের কাছে।
ইউরোপ যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ সমস্যা এবং সমাধান
ইউরোপ যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু সাধারণ সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশ কিছু সাধারণ সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে ভিসা প্রত্যাখ্যান বা আবেদন গ্রহণে বিলম্ব। অনেক সময় দেখা যায় ভিসা প্রত্যাখ্যান করে বা আবেদন গ্রহণ করতে অনেক বেশি দেরি করতে পারে। এটি ইউরোপ যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি খুব সাধারন সমস্যাগুলোর মধ্যে পড়ে। এছাড়াও পাসপোর্ট ইন্সুরেন্স বা আর্থিকপ্রমাণের ঘাটতি। অনেক সময় পাসপোর্ট এর কারনে ভিসা প্রত্যাখ্যান হয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও ইন্সুরেন্স বা আর্থিক প্রমাণের ঘাটতি দেখা দিলে অনেক সময় ভিসা প্রত্যাখ্যান বা আবেদন গ্রহণ করতে অনেক বেশি দেরি করে থাকে। এছাড়াও অনেক সময় ভাষাগত সমস্যার কারণেও ইউরোপ যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। অনেকেই সঠিক ভাবে ভাষা না শিখে বা ভাষা না জেনে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে যার ফলে এই ধরনের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোর সঠিকভাবে সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ পরবর্তীতে ভিসা পাওয়ার জন্য অনেক বেশি সাহায্য করবে।
ট্রিক্সপ্রমোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url