ডুমুর পাতার উপকারিতা এবং ডুমুর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ডুমুর পাতার উপকারিতা এবং ডুমুর ফল এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি ডুমুর সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
এবং ডুমুর ফল ও পাতার উপকারিতা ছাড়াও তার ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে জানতে পারবেন। তাই আপনি যদি একজন স্বাস্থ্যে সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আশা করি একটু সময় নিয়ে নিচের আর্টিকেলটি পড়বেন।

পেজ সূচিঃ ডুমুর পাতার উপকারিতা

ডুমুর পাতার উপকারিতা

  • ডুমুর পাতার উপকারিতা এবং ডুমুরের পাতাতে অ্যান্টি-এজিং গুনে ভরপুর এবং পরিপূর্ণ হয়ে আছে। ডুমুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হওয়ার কারনে এটি কোন মানুষের মুখের ব্রণের দাগ এবং যে কোন দাগ হওয়া থাকে রক্ষা করে থাকে। ডুমুরের পাতাতে এমন কিছু পদার্থ থাকে যা একজন মানুষের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে খুব কার্যকারী ভূমিকা রাখে।
  • জল বসন্ত কোন ব্যক্তির যদি হয়ে থাকে তাহলে ডুমুরের যেই পাতার উপরে ফোসকার মতো দেখা যায়, এমন পাতা ৮ থেক ১০টি নিয়ে রস করে রোগীকে খাওয়ালে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
  • যাদের প্রস্রাবে সমস্যা রয়েছে প্রস্রাব করতে জ্বালাপোড়া করে, এবং ফোটা ফোটা প্রস্রাব হয়ে থাকে প্রস্রাব পরিষ্কার হয়না সে ক্ষেত্রে ডুমুর পাতার রস করে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
  • যাদের বহুমূত্র রোগ আছে তাদের জন্য ও ডুমুর পাতা রস খুব উপকারি। যাদের ঘন ঘন প্রস্রাব সমস্যা আছে প্রস্রাব আটকিয়ে রাখতে পারেনা। এই অবস্থায় যদি ডুমুরের ভাজি, মাছের সাথে ঝোল, বা ভর্তা করে খেতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এবং আপনি কাঁচা ডুমুর ফল ৮ থেকে ১০টি সাথে লবন দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন ভালো উপকার পাবেন।

ডুমুর ফল এর উপকারিতা সম্পর্কে জানুন 

ডুমুর ফল এর উপকারিতা এবং তার পাশাপাশি ডুমুর পাতার উপকারিতা ও অনেক। অবহেলায় বেড়ে ওঠা এবং ঝোপঝাড়ে অযত্ন সহকারে একটি ফল হচ্ছে ডুমুর। সাধারনত ডুমুরের পাতা খসখসে এবং এর ফল নরম ও মিষ্টি হয়ে থাকে। ডুমুর আপনি কাঁচা এবং শুকনো দুই ভাবেই খেতে পারেন। ডুমুরে প্রচুর পরিমানে খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন রয়েছে যা একজন মানুষের স্বাস্থ্যে জন্য খুব উপকারি।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টঃ ডুমুর ফ্রি র‍্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে একজন মানুষের শরীরের প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে থাকে। সাধারনত ডুমুরে পলিফেনল নামক এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর রয়েছে যা ক্ষতি থেকে একজন মানুষের শরীরের টিস্যুগুলোকে রক্ষা করে থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ডুমুর বেশ কার্যকারী। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনি খাদ্য তালিকায় ডুমুর রাখতে পারেন। কারন ডুমুরে থাকা ফাইবার উপাদান আপনার স্বাস্থ্যের জন্য পাচনতন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে।
এবং কেউ যদি ডুমুর খাই তাহলে তার দীর্ঘ সময় পেট ভরা ভরা ভাব থাকে যা আপনাকে অন্য খাবার খেতে ইচ্ছে বোধ হয়না। ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ একজন মানুষের রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডুমুরে এমন উপাদান রয়েছে যা একজন মানুষের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ডুমুরে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ডায়াবেটিক রক্তের শর্করা মাত্রা হ্রাস করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ ডুমুরে যে ফাইবার থাকে তা একজন মানুষের অন্ত্রের গতিশীল করার জন্য খুব ভালো। এবং একজন মানুষের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারে।
কিডনির পাথর নিয়ন্ত্রণেঃ কিডনির পাথর নিয়ন্ত্রণে ডুমুর ফল খুব কার্যকারি। আপনি যদি কিছু ডুমুর পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি খেতে পারেন তাহলে কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং এই ভাবে আপনি বেশ কিছু দিন খেয়ে দেখতে পারেন। তাছাড়া আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে পারেন। 
হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যঃ একজন মানুষের মজবুত ও স্বাস্থ্যে কর হাড় প্রয়োজন হয়ে থাকে। এবং মজবুত হাড়ের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়ে থাকে আর ক্যালসিয়ামের একটি উৎস হচ্ছে ডুমুর। দুদ্ধজাত খাবার বাদে ও বিকল্প হিসেবে ডুমুর খুব কার্যকারি।
ভেজানো ডুমুরঃ একজন মানুষের বিভিন রোগ বালাই থেকে শরীরকে সুস্থ্য রাখতে হলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যে কর খাবার প্রয়োজন হয়ে থাকে। সে হিসেবে আপনি ডুমুরকে একটি স্বাস্থ্যে কর খাবার হিসেবে নিতে পারেন। আপনি যদি নিয়ম করে প্রতিদিন ২ থেকে ৩টি ডুমুর রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পানি সহ এবং আপনি যদি মিষ্টি স্বাদ করে খেতে চান তাহলে একটু মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
হৃৎপিন্ডের জন্যঃ ডুমুর একজন মানুষের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমান হ্রাস করতে সাহায্য করে থাকে। কারন ট্রাইগ্লিসারাইড হৃৎরোগের জন্য দায়ী তারা একজন মানুষের রক্তনালীর মধ্যে জমাট সৃষ্টি করতে সাহায্য করে যার ফলে একজন মানুষের হার্ড অ্যাটাকের মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

কাঁচা ডুমুরের উপকারিতা সম্পর্কে 

কাঁচা ডুমুরের উপকারিতা অনেক কাঁচা ডুমুর শরীরের জন্য খুব কার্যকারী। এবং তাছাড়াও কাঁচা ডুমুরের পাশাপাশি কিন্তু ডুমুর পাতার উপকারিতা বহুগুন রয়েছে সে ক্ষেত্রে আপনি ডুমুর পাতার রস করে খেতে পারেন ভালো ফল পাবেন। কিন্তু গরমে শুকনো ডুমুর না খাওয়াই ভালো।
শুকনো ডুমুরে প্রচুর পরিমান ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন বি৬ যা বিভিন্ন রোগের ঝঁকি কমায়। এবং শুকনো ডুমুরে শর্করার পরিমান বেশি থাকে ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতি হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গরম কালে শুকনো ডুমুর খাওয়া উচিত নয়। হজমের সমস্যা করতে পারে।
সে ক্ষেত্রে আপনি কাঁচা ডুমুর খেতে পারেন। কাঁচা ডুমুরে শর্করা পরিমান কম থাকে এবং পানির পরিমান বেশি থাকে ফলে গরম কালে কাঁচা ডুমুর খাওয়া শরীরের জন্য কার্যকারি। তাই আপনি গরম কালে শুকনো ডুমুরের পরির্বতে কাঁচা ডুমুর নিয়ম অনুযায়ী খেতে পারেন স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি।

রাতে ডুমুর খাওয়া যাবে কি

  • রাতে ডুমুর খাওয়া যাবে কি? ডুমুরে প্রচুর পরিমান পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন থাকে। আপনি যদি নিয়ম করে এক গ্লাস কুসুম দুধের সাথে দুটি ডুমুর খেতে পারেন তাহলে আপনার ঘুম ভালো হবে এবং অনিদ্রা সমস্যা দূর হবে। এই খনিজ গুলো রক্ত প্রবাহ পেশী সংকোচনে সাহায্য করে থাকে যা ঘুমের জন্য কার্যকারী।
  • ডুমুরে প্রচুর পরিমান ফাইবার রয়েছে যা একজন মানুষ কে সারারাত পূর্ণ রাখতে সাহায্যে করে থাকে এবং একজন মানুষের মধ্যে রাতের লালসা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

ডুমুর খাওয়ার আগে কি ভিজিয়ে রাখা উচিত

  • ডুমুর খাওয়ার আগে কি ভিজিয়ে রাখা উচিত? একজন মানুষ তার সকালে খাবারের তালিকায় ভেজানো ডুমুর রাখতে পারে। কারন ভেজানো ডুমুর আপনার সিস্টেমকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুলির একটি শক্তিশালী ডোজ হিসেবে কার্যকারী ভূমিকা রাখে। এবং একজন মানুষের সেলুলার স্বাস্থ্যে ও সামগ্রিক দীর্ঘয়ুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • ভেজানো ডুমুরে কিন্তু ভিটামিন সি এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কারি যে পুষ্টি উপাদান থাকে তা একজন মানুষের শরীরের থাকা কোন সংক্রমণ এবং অসুস্থ্যতার প্রতিরোধ করতে ভূমিকা রাখে।
  • এ জন্য আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় ডুমুর রাখতে পারেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ফল পাবেন। এবং তার সাথে ডুমুর পাতার উপকারিতা ও অনেক যাদের বহুমূত্র রোগের সমস্যা আছে তারা যদি নিয়ম করে ডুমুর পাতার রস করে খেতে পারে তাহলে বহুমূত্র রোগের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।

ডুমুর খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানুন 

  • ডুমুর খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে। ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক কিন্তু তারপরে ও সব কিছুর অতিরিক্ত ভালো না।
  • কারো কারো কিন্তু ডুমুরের রসে বা আঠাতে এলার্জি হতে পারে।
  • এবং বেশি পরিমান ডুমুর ফল খাওয়ার ফলে পেট খারাপ হওয়ার মতো সমস্যা হয়ে পারে।
  • এবং কিছু কিছু ওষুধ আছে যা ডুমুরের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে বা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে
  • আবার অনেক সময় কিন্তু ডুমুর একজন মানুষের রক্তকে পাতলা করে ফেলতে পারে এক্ষেত্রে যারা অস্ত্রোপচার করবেন তার আগে ডুমুর না খাওয়াই ভালো।
  • তাই আপনি যদি একজন স্বাস্থ্যে সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডুমুর ফল খাবেন। তাই ডুমুর পাতার উপকারিতা এবং ডুমুরের উপকারিতার পাশাপাশি তার ক্ষতিকারক দিক ও রয়েছে সে দিকে খেয়াল রেখে নিয়ম অনুযায়ী ডুমুর খাওয়া উচিত। 

ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন

  • ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম প্রথমে আপনি ১ থেকে ২টি ডুমুর রাতে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। এবং আপনি যদি স্বাদ করে খেতে চাপ তাহলে হালকা মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • ডুমুর আপনি সবজির সাথে মিশিয়ে ভাজি করতে খেতে পারেন।
  • ভর্তা করে খেতে পারেন, তারপর ছোট মাছের সাথে ঝোল করে ও খেতে পারেন।
  • ডুমুর ফল শুকিয়ে আবার অন্ন্য ফলের সাথে ও খেতে পারেন।
  • ডুমুর ফল কাঁচা বা পাকা খেতে পারেন।
  • এবং ডুমুর পাতার উপকারিতা ও অনেক। ডুমুর পাতার রস করে খেতে পারেন তাহলে আপনার যদি প্রস্রাবের সমস্যা থাকে তা দূর করতে সাহায্য করবে।
  • ডুমুরের পাতা, মূল, নির্যাস, বাকল থেকে কিন্তু বিভিন্ন ওষুধ তৈরী হয়ে থাকে। এবং আপনি প্রতিদিন ২ থেকে ৩টি ডুমুর ফল খেতে পারেন। এবং ভিজিয়ে ও খেতে পারেন।

শেষ কথাঃ ডুমুর পাতার উপকারিতা

ডুমুর পাতার উপকারিতা এবং ডুমুর ফলের উপকারিতা তার সাথে ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে গিয়েছেন। এবং আপনি যদি একজন স্বাস্থ্যে সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে নিয়ম করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডুমুর ফল এবং ডুমুর পাতার রস খেতে পারেন খেতে পারেন।

এবং আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যেমে আপনারা যদি একটু উপকৃত হয়ে থাকে তাহলে আশা করি আপনাদের পরিচিতদের শেয়ার করবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ট্রিক্সপ্রমোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url