টানা ৭দিন কালোজিরা খেলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত
টানা ৭দিন কালোজিরা খেলে কি হয় সে সম্পর্কে আলোচন করা হয়েছে। এবং কালোজিরা
খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে ও এই আর্টিকেলে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা
হয়েছে।
তাছাড়া ও আজকের এই আর্টিকেলে কালোজিরার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বাদে ও তার
পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে সব কিছু আলোচনা করা হয়েছে।
পেজ সূচিঃ টানা ৭দিন কালোজিরা খেলে কি হয়
টানা ৭দিন কালোজিরা খেলে কি হয়
টানা ৭দিন কালোজিরা খেলে কি হয়? কোন ব্যক্তি টানা ৭দিন কালোজিরা খাওয়ার ফলে,
যৌন সমস্যা দূর করে থাকে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হজমের সমস্যা দূর করে,
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে, উচ্চ রক্তচাপ দূর, টাইপ ২ ডায়াবেটিস
নিরাময় সাহায্য করে এবং অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্টিক দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
একজন ব্যক্তি যদি টানা ৭ দিন কালোজিরা নিয়ম করে খেতে পারে তাহলে তার এ্যাজমা,
অ্যালার্জি মতো শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। এছাড়া
কালোজিরা রক্তে শর্করা পরিমান নিয়ন্ত্রন করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
এবং একজন ব্যক্তি যদি কালোজিরা নিয়মিত খাই তাহলে তার শরীরের বিভিন্ন রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ্য রাখে।
কালোজিরার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান
কালোজিরার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান অনেক অনেক রয়েছে। এ জন্য টানা ৭দিন
কালোজিরা খেলে কি হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো কেউ যদি জেনে থাকে তাহলে সে
অবশ্যই নিয়ম করে কালোজিরা খাওয়ার চেষ্টা করবে, কারন কালোজিরাতে বহু পুষ্টিগুন
রয়েছে সাধারনত প্রায় শতাধীক
পুষ্টিগুনের
অধিকারি এই কালোজিরা।
কিন্তু কি কি উপাদান রয়েছে তা আমাদের ধারনা নাই, কালোজিরার প্রধান উপাদান তার
মধ্যে এতে আমিষ ২১ শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ, চর্বি ৩৫ শতাংশ, এ ছাড়া ও কালোজিরাতে
বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন রয়েছে।
এবং পুষ্টিবিদদের মতে, কালোজিরাতে প্রতিগ্রাম প্রোটিনের পরিমান ২০৮ মাইক্রোগ্রাম,
নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম, আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম,
কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম, জিংক৬০ মাইক্রোগ্রাম, ফোলাসিন ৬১০ আইউ, ভিটামিন বি১ ১৫
মাইক্রোগ্রাম, ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম।
এবং কালোজিরাতে আরো উপাদান রয়েছে যেমনঃ থাইমোকিনোন, নাইজেলোন, ও স্থায়ী তেল। এবং
কালোজিরা তেলে অলিক এসিড, লিনোলিক এসিড, ফসফেস, লৌহ, ক্যালসিয়াম পটাসিয়াম, আয়রন,
ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন সি ইত্যাদি রয়েছে।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল-
স্মরন শক্তি বৃদ্ধিতেঃ কালোজিরা স্মরন শক্তিতে বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন
করে থাকে। এক চা চামচ পুদিনা পাতা রস, এক চা চামচ কমলার রস, এবং তার সাথে এক চা
চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার নিয়ম করে সেবন করতে পারলে ভালো ফলাফল
পাওয়া যায়। এবং কেউ যদি এইভাবে নিয়মিত খেয়ে থাকে তাহলে তার দুশ্চিন্তা দূর করতে
সাহায্য করবে এবং একজন মানুষের মেধা বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
হজমের সমস্যা দুরীকরণেঃ একজন মানুষ যদি এক বা দুই চা চামচ কালোজিরা বেটে
ভালো করে মিশিয়ে দিনে দুই বা তিনবার খেতে পারে তাহলে তার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে
সাহায্য করবে এবং তার পেট ফাপা ফাপা ভাব ও দূর করতে সাহায্য করবে। এবং কালোজিরা
নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক যা মস্তিস্কের রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে যা
মস্তিস্কের স্মরন শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মাথা ব্যাথা নিরাময়েঃ হঠাৎ করে কোন ব্যক্তির মাথা ব্যাথা শুরু হলে ১/২ চা
চামচ কালোজিরা তেল ভালোভাবে এবং সুন্দর করে মাথায় মালিশ করতে পারে এবং ১ চা চামচ
কালোজিরা তেলের সমপরিমান মধুসহ যদি একজন ব্যক্তি দিনে তিনবার খেতে পারে তাহলে সেই
ব্যক্তির মাথা ব্যাথা নিরাময় হবে। আর এইটা ২/৩ সপ্তাহ খেতে পারলে একজন ব্যক্তির
জন্য ভাল উপকার পাওয়া যায়।
তাছাড়া ও একজন ব্যক্তির মাথা ব্যাথা নিরাময়ে, মাথার এবং কপালের উভয় চিবুকে এবং
কানের চারপাশে যদি কালোজিরা তেল দিনে ৩/৪ বার করে ভালোকরে মালিশ করে দেয় তাহলে
ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
বাতের ব্যাথা দূরীকরণেঃ কোন ব্যক্তির যদি বাতের ব্যাথা থাকে। এবং যেই
স্থানে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে, সেই খানে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে
হবে তারপর কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এবং এক চা
চামচ হলুদের রস এবং এক চা চামচ মধু বা এক কাপ চায়ের সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে
প্রতিদিন ৩বার খেতে হবে এবং এরকম করে ২/৩ সপ্তাহ খেতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া
যাবে।
হার্ডের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রেঃ যারা হার্ডের রোগী তাদের জন্য কিন্তু
কালোজিরার তেল অনেক উপকারি। এক চা চামচ কালোজিরার তেলের সাথে যদি এক কাপ দুধ ভালো
করে মিশিয়ে প্রতিদিন দুই বার করে খেতে পারলে হার্ডের সমস্যা থেকে মুক্ত পাওয়া
সম্ভব। এইভাবে ৪/৫সপ্তাহ খেতে পারলে হার্ডের রোগীদের ভালো উপকার হয়।
সর্দি ও কাশি দূরীকরণেঃ সর্দি ও কাশি দূরীকরণে আপনারা এক চা চামচ
কালোজিরার তেলের সাথে এক চা চামচ মধু বা এক কাপ রং চা মিশিয়ে প্রতিদিন ৩ বার খেতে
হবে এবং রোগ সেরে না উঠা পর্যন্ত মাথায় ও ঘাড়ে কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে।
আবার এক চা চামচ কালোজিরার তেলের সাথে তিন চা চামচ মধু এবং দুই চা চামচ তুলসী
পাতার রস এক সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে জ্বর, সর্দি, কাশি, ব্যাথা তাড়াতাড়ি নিরাময়
হয়। আর যদি সর্দি বসে যায় তাহলে কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিলে ভালো ফল পাওয়া
যায়।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে রাখতেঃ যাদের ব্লাড প্রেসার রয়েছে তারা প্রতিদিন
সকালে রসুনের দুটি করে কোষ চিবিয়ে খেতে হবে, এবং কালোজিরার তেল ব্লাড প্রেসার
রোগীর সমস্থ শরীর মালিশ করতে হবে। এবং একজন মানুষের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে
রাখতে এক চা চামচ কালোজিরার তেল এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে সপ্তাহে ২/৩ দিন খেতে
হবে তাহলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কালোজিরা অনেক কার্যকারী।
যাদের ডায়াবেটিস রোগ রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে যদি এক চিমটি কালোজিরা
এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে পান করে তাহলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আবার এক চা চামচ
কালোজিরার তেল, যদি এক কাপ রং চা বা গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারে তাহলে ভালো
উপকার পাওয়া যায়। এবং কালোজিরা কিন্তু রক্তে গ্লকোজের পরিমান নিয়ন্ত্রন রাখতে বেশ
কার্যকারী।
দাঁত ব্যথা দূরীকরণেঃ কোন ব্যক্তি যদি দাঁতের ব্যথা অনুভব করে তাহলে হালকা
কসুম গরম পানির সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে কুলি করলে দাঁতের ব্যথা কোমে যায়। আবার
যদি কেউ চা বা গরম পানির সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে পান করতে পারলে হৃদ রোগ এ
অনেক উপকার পাওয়া যায়।
হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের ক্ষেত্রেঃ যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট
জনিত রোগ রয়েছে তাদের জন্য কালোজিরা অত্যন্ত উপকারি। একজন ব্যক্তি যদি কালোজিরার
র্ভতা নিয়মিত খেতে পারে তাহলে তার শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি জনিত সমস্যা নিরাময় হয়।
পাইলস জনিত সমস্যাঃ যাদের পাইলস জনিত সমস্যা রয়েছে তারা কালোজিরা নিয়মিত
খেতে পারলে উপকার পাওয়া যায়। এবং এক টেবিল চামচ মাখন ও এক টেবিল চামচ কালোজিরার
তেল মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এবং মাখন ও কালোজিরা তেলের সাথে যদি এক টেবিল
চামচ তিলের তেল মিশিয়ে সকালে নিয়মিত খালি পেটে অন্তত ১/২ মাস খেতে পারেন তাহলে
ভালো ফল পাবেন।
অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি কমাতেঃ যাদের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি সমস্যা রয়েছে
তারা নিয়মিত অর্ধেক কালোজিরা তেলের সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে
খেতে পারলে মেদ বা চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি? কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার বহুবিদ উপকার
রয়েছে। কালোজিরা যদি আমরা নিয়মিত চিবিয়ে খেতে পারি তাহলে আমাদের হজমশক্তি
বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, কিডনির সমস্যা দূর করে,
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, গ্যাস্ট্রিক কমায়। তাহলে আপনারা যদি
কালোজিরা চিবিয়ে খেতে পারেন তাহলে এগুলো উপকার পাবেন।
সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক কালোজিরাকে বলা হয় মৌষুধ। একজন
ব্যক্তি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেতে পারে তাহলে বিভিন্ন
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। চর্মরোগ, ক্যান্সার, ওজন নিয়ন্ত্রন, ও
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে।
সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেতে পারলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এবং টানা ৭দিন
কালোজিরা খেলে কি হয় সেইটা যদি জানেন তাহলে নিয়ম করে টানা ৭দিন কালোজিরা খেয়ে
দেখতে পারেন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ফল পাবেন।
কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা কি
কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে। কিন্তু কালোজিরার খাওয়ার তেমন কোন বিশেষ
অপকারিতা নেই। গর্ভবস্থায় কালোজিরার তেল খাওয়া উচিত নয় এবং দুই বছরের কম
বাচ্চাদের কালোজিরার তেল খাওয়ানো উচিত নয়। তবে চাইলে বাহ্যিক ব্যবহার করতে পারবে।
কিন্তু তারপরে যদি দীর্ঘদিন কালোজিরা সেবন করলে বিভিন্ন সমস্যা লক্ষ করা যায়।
ত্বকএর প্রদাহ জ্বালাপোড়া, পাকস্থলীর সংকচন, বুক জ্বালা ও বমিবমি ভাব হতে পারে।
যারা তিন মাসের অধিক সময় ধরে নিয়মিত সেবন করে যাচ্ছেন তাদের এগুল সমস্যা হতে
পারে।
ত্বক জ্বালাপোড়া ক্ষেত্রেঃ অ্যালার্জি সমস্যা যাদের আছে তারা যদি বেশি
পরিমান কালোজিরা তেল সেবন করে থাকে বা মাখলে তাদের অ্যালার্জি সমস্যা সৃষ্টি হতে
পারে। তাই পরামর্শ অনুযায়ী আমরা কালোজিরা সেবন করবো।
বুকে জ্বালাপোড়া ক্ষেত্রেঃ একটা মানুষের জীবনে কোন কিছু অতিরিক্ত ভালো না।
আপনারা যদি অতিরিক্ত পরিমানে কালোজিরা সেবন করেন তাহলে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে।
অ্যালার্জি যাদের রয়েছে তারা যদি বেশি পরিমান কালোজিরা সেবন করে থাকেন তাহলে
তাদের বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে। গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ রয়েছে তারা
যদি কালোজিরা বেশি পরিমান খাই তাদের বুকে জ্বালাপোড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অকালে গর্ভপাত হওয়ার ক্ষেত্রেঃ একজন মহিলা যদি সকালে বেশি করে মধুর সাথে
কালোজিরা মিশিয়ে খাই তাহলে সেই মহিলার অকালে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি
পরিমান থাকে।
শেষ কথাঃ টানা ৭দিন কালোজিরা খেলে কি হয়
টানা ৭দিন কালোজিরা খেলে কি হয় এবং কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং তার
পুষ্টিগুন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনেছেন। এবং আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন
মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে উপরের বর্ণিত তথ্যের নিয়ম ও পরামর্শ অনুযায়ী কালোজিরা খেতে
পারেন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ফল পাবেন।
এবং আজকের এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যেমে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আশা করি
অনুগ্রহ করে আপনাদের পরিচিত ব্যক্তিরদের নিকট শেয়ার করবেন।
ট্রিক্সপ্রমোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url